আল-কুরআনের আলোকে জাহান্নাম

আল-কুরআনের আলোকে জাহান্নাম

আল-কুরআনের আলোকে জাহান্নামের বিবরণ -বযলুর রহমান আল্লাহ তা‘আলা পাপিষ্ঠ বান্দাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। যারা অবাধ্য, অস্বীকারকারী, পাপী তাদেরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার বিধান অনুযায়ী তার নির্দেশিত পথে চললে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতবাসী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জান্নাত-জাহান্নামের বিশদ বিবরণ বিধৃত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তি এবং জাহান্নামীদের খাদ্য, পানীয় প্রভৃতির বিবরণ পেশ করা হ’ল- (ক) অত্যুষ্ণ বায়ু ও কৃষ্ণবর্ণের ছায়া :জাহান্নামের আগুনের তীব্র তাপদাহ ও উষ্ণতা এত প্রখর ও যন্ত্রণাদায়ক হবে, যা কল্পনাতীত। সেখানে রয়েছে আগুন হ’তে প্রস্ত্ততকৃত পোশাক,বিছানা, ছায়া, ভারী বেড়ি এবং আগুনের জিঞ্জির, আগুনে উত্তপ্ত ও প্রজবলিত কোটি কোটি টন ভারী লোহা ও গুর্জ, আগুনে উত্তপ্ত করা আসনসমূহ প্রভৃতি। সুতরাং যার সৃষ্টিলেলিহান অগ্নিশিখা হবে তার অভ্যন্তরস্থ বায়ুর ধ্বংসলীলা কত ভয়ংকর হ’তে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﺸِّﻤَﺎﻝِ ﻣَﺎ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﺸِّﻤَﺎﻝِ، ﻓِﻲْ ﺳَﻤُﻮْﻡٍ ﻭَﺣَﻤِﻴْﻢٍ، ﻭَﻇِﻞٍّ ﻣِﻦْ ﻳَﺤْﻤُﻮْﻡٍ، ﻻَ ﺑَﺎﺭِﺩٍ ﻭَﻻَ ﻛَﺮِﻳْﻢٍ .‘আর বাম দিকের দল কত হতভাগ্য, বাম দিকের দল! তারা থাকবে অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে, কৃষ্ণবর্ণের ধূম্রের ছায়ায়, যা শীতলও নয় আবার আরামদায়কও নয়’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৪১-৪৪)। জাহান্নামীরা জাহান্নামের আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে এক ছায়াকর বৃক্ষের দিকে ছুটে আসবে। যখন সেখানে পৌঁছবে তখন বুঝতে পারবে যে, এটা কোন ছায়াদানকারী বৃক্ষ নয়, বরং এটা জাহান্নামের ঘনকালো ধোঁয়া। অনুরূপভাবে জাহান্নামের বিদগ্ধকারী কঠিন লু-হাওয়া দিয়ে কাফেরদের শাস্তি দেওয়া হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻗَﺒْﻞُ ﻓِﻲْ ﺃَﻫْﻠِﻨَﺎ ﻣُﺸْﻔِﻘِﻴْﻦَ، ﻓَﻤَﻦَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻭَﻗَﺎﻧَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤُﻮْﻡِ . ‘তারা বলবে, পূর্বে আমরা পবিবারবর্গের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। তারপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে অগ্নিশাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন’(তূর ৫২/২৬-২৭)। জাহান্নামের ছায়ার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﺍِﻧْﻄَﻠِﻘُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺑِﻪِ ﺗُﻜَﺬِّﺑُﻮْﻥَ، ﺍﻧْﻄَﻠِﻘُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻇِﻞٍّ ﺫِﻱْ ﺛَﻼَﺙِ ﺷُﻌَﺐٍ، ﻻَ ﻇَﻠِﻴْﻞٍ ﻭَﻻَ ﻳُﻐْﻨِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻬَﺐِ، ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺮْﻣِﻲْ ﺑِﺸَﺮَﺭٍ ﻛَﺎﻟْﻘَﺼْﺮِ، ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﺟِﻤَﺎﻟَﺖٌ ﺻُﻔْﺮٌ، ﻭَﻳْﻞٌ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻟِﻠْﻤُﻜَﺬِّﺑِﻲْﻥَ . ‘তোমরা যাকে অস্বীকার করতে, চল তারই দিকে। চল তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া শীতল নয় এবং যে ছায়া অগ্নিশিখা হ’তে রক্ষা করতে পারে না। তা উৎক্ষেপণ করবে অট্টালিকাতুল্য বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ, তা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেণী সদৃশ। সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য’ (মুরসালাত ৭৭/২৯-৩৪)। জাহান্নামের অগ্নিবায়ুর উষ্ণতা এত প্রখর ও কঠিন, যা সকল জাহান্নামীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। যে আগুন মানুষকে জীবিত থাকতেও দিবে না, আবার মরতেও দিবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﺳَﻘَﺮُ، ﻻَ ﺗُﺒْﻘِﻲْ ﻭَﻻَ ﺗَﺬَﺭُ، ﻟَﻮَّﺍﺣَﺔٌ ﻟِّﻠْﺒَﺸَﺮِ . ‘ তুমি কি জান সাক্বার কি? তা (মানুষকে) অক্ষতও রাখবে না, আবার ছেড়েও দিবে না। মানুষকে দগ্ধ করবে’ (মুদ্দাচ্ছির ৭৪/২৭-২৯)। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ﻛَﻠَّﺎ ﻟَﻴُﻨْﺒَﺬَﻥَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤُﻄَﻤَﺔِ، ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﺍﻟْﺤُﻄَﻤَﺔُ، ﻧَﺎﺭُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟْﻤُﻮﻗَﺪَﺓُ، ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﺗَﻄَّﻠِﻊُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﻓْﺌِﺪَﺓِ، ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣُّﺆْﺻَﺪَﺓٌ، ﻓِﻲْ ﻋَﻤَﺪٍ ﻣُﻤَﺪَّﺩَﺓٍ . ‘কখনো না। সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন পিষ্টকারী কি? এটা আল্লাহ্র প্রজ্বলিত আগুন, যা হৃদয়ে পৌঁছবে। এতে তাদের বেঁধে দেওয়া হবে লম্বা লম্বা খুঁটিতে’ (হুমাযাহ ১০৪/৪-৯)। জাহান্নামের আগুন অনবরত প্রজ্বলন করা হবে। তাপ কমে যাওয়ার সাথে সাথে আবার জ্বালানো হবে। তা কখনো নির্বাপিত হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﻦْ ﺧَﻔَّﺖْ ﻣَﻮَﺍﺯِﻳْﻨُﻪُ، ﻓَﺄُﻣُّﻪُ ﻫَﺎﻭِﻳَﺔٌ، ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﻫِﻴَﻪْ، ﻧَﺎﺭٌ ﺣَﺎﻣِﻴَﺔٌ . ‘আর যার (নেকীর) পাল্লা হালকা হবেতার স্থান হবে হাবিয়া। আপনি কি জানেন হাবিয়া কি? তা হ’ল জ্বলন্ত আগুন’ (ক্বারি‘আহ ১০১/৮-১১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ ﺭَﺟُﻠَﻴْﻦِ ﺃَﺗَﻴَﺎﻧِﻰ… ﻗَﺎﻻَ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﻳُﻮْﻗِﺪُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﺧَﺎﺯِﻥُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ‘আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম যে, দু’জন লোক আমার কাছেএসে বলল,… যিনি আগুন প্রজ্বলিত করছেন তিনি হ’লেন জাহান্নামের দারোগা ‘মালেক’।[1] জাহান্নামের আগুনের জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﻭَﻗُﻮْﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ ﺃُﻋِﺪَّﺕْ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳْﻦَ ‘অতএব সে আগুনকে ভয় কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য’ (বাক্বারাহ ২/২৪)। জাহান্নামের আগুনের লু-হাওয়া সহ্য করা মানুষের জন্য অসম্ভব হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ﻟَﻘَﺪْ ﺟِﻰﺀَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺣِﻴْﻦَ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧِﻰْ ﺗَﺄَﺧَّﺮْﺕُ ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼِﻴْﺒَﻨِﻰْ ﻣِﻦْ ﻟَﻔْﺤِﻬَﺎ … ‘(সূর্য গ্রহণের ছালাতের সময়) আমার নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হ’ল, যখন তোমরা আমাকে পিছনে সরেআসতে দেখেছিলে। এ ভয়ে যাতে আমার শরীরে আগুনের উষ্ণতা নালাগে…’।[2] গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতা জাহান্নামের আগুনের উষ্ণ বাষ্পের কারণেই হয়ে থাকে এবং জ্বরও জাহান্নামের আগুনের একটি অংশ। যেমন হাদীছে এসেছে, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ t ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ r ﻗَﺎﻝَ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﺍﻟْﺤَﺮُّ ﻓَﺄَﺑْﺮِﺩُﻭْﺍ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺷِﺪَّﺓَ ﺍﻟْﺤَﺮِّ ﻣِﻦْ ﻓَﻴْﺢِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻭَﺍﺷْﺘَﻜَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺑِّﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺃَﻛَﻞَ ﺑَﻌْﻀِﻰْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻓَﺄَﺫِﻥَ ﻟَﻬَﺎ ﺑِﻨَﻔَﺴَﻴْﻦِ ﻧَﻔَﺲٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺸِّﺘَﺎﺀِ ﻭَﻧَﻔَﺲٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺼَّﻴْﻒِ ﻓَﻬُﻮَ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣَﺎ ﺗَﺠِﺪُﻭْﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺮِّ ﻭَﺃَﺷَﺪُّ ﻣَﺎ ﺗَﺠِﺪُﻭْﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺰَّﻣْﻬَﺮِﻳْﺮِ . আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন ছালাত (বিলম্বে আদায়ের) মাধ্যমে তা ঠান্ডা কর। কারণ গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের কারণে হয়। আর জাহান্নাম আল্লাহ্র কাছে অভিযোগ করল যে, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে (অতএব আমাকে নিঃশ্বাস ত্যাগের অনুমতি দিন)। অতঃপর আল্লাহ তাকে বছরে দু’বার নিঃশ্বাস ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে আর অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা গ্রীষ্মকালে যে কঠিন গরম অনুভব কর, তা এ নিঃশ্বাস ত্যাগের কারণে আর শীতকালে যে কঠিন শীত অনুভব কর, তাও ঐ নিঃশ্বাস ত্যাগের কারণে হয়ে থাকে’।[3] (খ) জাহান্নামের পানীয় : জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের তীব্রতায় তার অধিবাসীদের পিপাসায় বুক ফেটে যাবার উপক্রম হবে। তৃষ্ণার্ত পাপীরা পানির জন্য হাহাকার করবে। বুকফাটা আর্তনাদ করবে একফোঁটা পানির জন্য। সেদিন তাদের গগণবিদারী চিৎকার শুনার কেউ থাকবে না। এমন কঠিন মুহূর্তে তাদেরকে দেওয়া হবে রক্ত, পূঁজ মিশ্রিত, দুর্গন্ধযুক্ত উত্তপ্ত পানি। প্রচন্ড পিপাসায় তারা উক্ত পানীয় পান করবে। কিন্তু তা তাদের তৃষ্ণা মেটাবে না। বরং আযাবের আরেক অধ্যায়ের সূচনা হবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের প্রদত্ত পাঁচ প্রকার পানীয়ের বিবরণ পাওয়া যায়।[4] পানীয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হ’ল। ১. ﺣَﻤِﻴْﻢٌ ﻣَﺎﺀٌ (উত্তপ্ত পানি) : কাফেরদেরকে জাহান্নামে ফুটন্ত পানীয় পান করতে দেওয়া হবে। এতে তার নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। তাদেরকে যখন খাদ্য হিসাবে যাক্কূম গাছের তিক্ত কাঁটাযুক্ত ফল দেওয়া হবে, তখন তা গলায় বিঁধে গেলে তারা পানি চাইবে। তখন তাদেরকে গরম পানি দেয়া হবে এবং তারা তা তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায় পান করতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟُّﻮْﻥَ ﺍﻟْﻤُﻜَﺬِّﺑُﻮْﻥ،َ ﻟَﺂﻛِﻠُﻮْﻥَ ﻣِﻦْ ﺷَﺠَﺮٍ ﻣِّﻦْ ﺯَﻗُّﻮْﻡٍ، ﻓَﻤَﺎﻟِﺌُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﺒُﻄُﻮْﻥَ، ﻓَﺸَﺎﺭِﺑُﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴْﻢِ، ﻓَﺸَﺎﺭِﺑُﻮْﻥَ ﺷُﺮْﺏَ ﺍﻟْﻬِﻴْﻢِ، ﻫَﺬَﺍ ﻧُﺰُﻟُﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦِ . ‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই যাক্কূম বৃক্ষ হ’তে আহার করবে এবং তা দিয়ে তোমাদের পেট পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে টগবগে ফুটন্ত পানি। তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। ক্বিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন’(ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৫১-৫৬)। এ মর্মে তিনি আরো বলেন, ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﺂﻛِﻠُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻓَﻤَﺎﻟِﺌُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﺒُﻄُﻮْﻥَ، ﺛُﻢَّ ﺇِﻥَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻟَﺸَﻮْﺑًﺎ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤِﻴْﻢٍ . ‘তা থেকে তারা অবশ্যই আহার করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে। অতঃপর তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ’ (ছাফফাত ৩৭/ ৬৬-৬৭)। জাহান্নাম অস্বীকারকারীদের শাস্তির বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻫَﺬِﻩِ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺍﻟَّﺘِﻲْ ﻳُﻜَﺬِّﺏُ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺠْﺮِﻣُﻮْﻥَ، ﻳَﻄُﻮْﻓُﻮْﻥَ ﺑَﻴْﻨَﻬَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺣَﻤِﻴْﻢٍ ﺁﻥٍ . ‘এটা সেই জাহান্নাম, যাকে অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে’ (আর-রহমান ৫৫/৪৩-৪৪)। পৃথিবীর মানুষদের নিকটে আল্লাহ তা‘আলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ﻛَﻤَﻦْ ﻫُﻮَ ﺧَﺎﻟِﺪٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﺳُﻘُﻮْﺍ ﻣَﺎﺀً ﺣَﻤِﻴْﻤًﺎ ﻓَﻘَﻄَّﻊَ ﺃَﻣْﻌَﺎﺀَﻫُﻢْ ‘(মুত্তাক্বীরা কি তাদের মত) যারা জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হবে এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে উত্তপ্ত পানি, যা তাদের নাড়ি- ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৫)। ২. ﻏَﺴَّﺎﻕٌ ﻣَﺎﺀٌ (দুর্গন্ধযুক্ত পানি) : ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এটি জাহান্নামীদের গলিত রস বিশেষ।[5] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ’ (ছোয়াদ ৩৮/৫৫-৫৮)। ৩. ﻭَﻏِﺴْﻠِﻴْﻦٌ ﻣَﺎﺀٌ ﺻَﺪِﻳْﺪٌ (ক্ষতস্থান হ’তে নির্গত পুঁজ ও রক্ত): জাহান্নামীদের শরীরের পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত মাংসকে বা ফোঁড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে ﻏِﺴْﻠِﻴْﻦ বলা হয়।[6] আর ﺻَﺪِﻳﺪ বলা হয় ফোঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত রস বা পুঁজকে।[7] উপরোক্ত দুর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র পানি, পুঁজ হবে জাহান্নামীদের পানীয়। যা তারা অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﻣِﻦْ ﻭَّﺭَﺍﺋِﻪِ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﻭَﻳُﺴْﻘَﻰ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ ﺻَﺪِﻳْﺪٍ، ﻳَﺘَﺠَﺮَّﻋُﻪُ ﻭَﻻَ ﻳَﻜَﺎﺩُ ﻳُﺴِﻴْﻐُﻪُ ﻭَﻳَﺄْﺗِﻴْﻪِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣَﻜَﺎﻥٍ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﺑِﻤَﻴِّﺖٍ ﻭَﻣِﻦْ ﻭَّﺭَﺍﺋِﻪِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻏَﻠِﻴْﻆٌ . ‘তাদের প্রত্যেকের পরিণাম জাহান্নাম এবং সকলকে পান করানো হবে অপবিত্র দুর্গন্ধযুক্ত গলিত পুঁজ। যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে, আর তা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার নিকটে মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে চতুর্দিক থেকে। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং এরপর সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে’ (ইবরাহীম ১৪/১৬-১৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫَﺎﻫُﻨَﺎ ﺣَﻤِﻴْﻢٌ، ﻭَﻻَ ﻃَﻌَﺎﻡٌ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﻏِﺴْﻠِﻴْﻦٍ، ﻻَ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻪُ ﺇِﻻَّ ﺍﻟْﺨَﺎﻃِﺌُﻮْﻥَ . ‘অতএব সেখানে সেদিন তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ব্যতীত। যা শুধুমাত্র অপরাধীরাই ভক্ষণ করবে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/৩৫-৩৭)। ৪. ﺍﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻣَﺎﺀُ (তৈলাক্ত গরম পানি) : উত্তপ্ত তৈলাক্ত পানীয়কে ﺍﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻣَﺎﺀُ বলে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ﺍﻟْﻤُﻬْﻞُ হ’ল উত্তপ্ত তেলের সর্বশেষ অংশ।[8]ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কদর্যপূর্ণ গরম তৈলাক্ত পানীয়কে ﺍﻟْﻤُﻬْﻞُ বলা হয়।[9] যাহহাক (রহঃ) বলেন, অতি গাঢ় কৃষ্ণ পানীয়কে ﺍﻟْﻤُﻬْﻞُ বলে।[10] এটা জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে প্রদান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﻥْ ﻳَﺴْﺘَﻐِﻴْﺜُﻮْﺍ ﻳُﻐَﺎﺛُﻮْﺍ ﺑِﻤَﺎﺀٍ ﻛَﺎﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻳَﺸْﻮِﻱ ﺍﻟْﻮُﺟُﻮْﻩَ ﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺏُ ﻭَﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣُﺮْﺗَﻔَﻘًﺎ . ‘তারা পানি চাইলে তাদেরকে বিগলিত গরম তৈলাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় প্রদান করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডল বিদগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয় আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল’! (কাহাফ ১৮/২৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ﺇﻥَّ ﺷَﺠَﺮَﺕَ ﺍﻟﺰَّﻗُّﻮْﻡِ، ﻃَﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﺄَﺛِﻴْﻢِ، ﻛَﺎﻟْﻤُﻬْﻞِ ﻳَﻐْﻠِﻲْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒُﻄُﻮْﻥِ، ﻛَﻐَﻠْﻲِ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴْﻢِ. ‘নিশ্চয়ই যাক্কূম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, যা গলিত তাম্রের মত, তা তার পেটে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত’ (দুখান ৪৪/৪৩-৪৬)। ৫. ﻃِﻴْﻨَﺔُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ (শরীর থেকে নির্গত ঘাম) : জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত ঘাম অথবা শরীরের ফোঁড়া থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজকে ﻃِﻴْﻨَﺔُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ বলা হয়।[11] পৃথিবীতে যারা মদ কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করত এবং যারা অহংকারে স্ফীত হয়ে দুনিয়ায় চলাচল করত, তাদেরকে জাহান্নামে শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বা বিষাক্ত পুঁজ পান করতে দেওয়া হবে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻬْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸْﺮَﺏُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻜِﺮَ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻘِﻴَﻪُ ﻣِﻦْ ﻃِﻴْﻨَﺔِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻃِﻴْﻨَﺔُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺮَﻕُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺃَﻭْ ﻋُﺼَﺎﺭَﺓُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্ত্তই হারাম। আর আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গীকার করেছেন, যে ব্যক্তি নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে জাহান্নামে তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করানো হবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, তা হ’ল জাহান্নামীদের ঘাম বা পুঁজ’।[12] অন্য হাদীছে এসেছে আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ﻳُﺤْﺸَﺮُ ﺍﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُﻭَﻥْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻝَ ﺍﻟﺬَّﺭِّ ﻓِﻰْ ﺻُﻮَﺭِ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻳَﻐْﺸَﺎﻫُﻢُ ﺍﻟﺬُّﻝُّ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣَﻜَﺎﻥٍ ﻓَﻴُﺴَﺎﻗُﻮْﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺳِﺠْﻦٍ ﻓِﻰْ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻳُﺴَﻤَّﻰ ﺑُﻮْﻟَﺲَ ﺗَﻌْﻠُﻮْﻫُﻢْ ﻧَﺎﺭُ ﺍﻷَﻧْﻴَﺎﺭِ ﻳُﺴْﻘَﻮْﻥَ ﻣِﻦْ ﻋُﺼَﺎﺭَﺓِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻃِﻴْﻨَﺔِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ . ‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীরা মানুষরূপী ছোট্ট পিপীলিকা সদৃশ হবে। লাঞ্ছনা ও অপমান তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। জাহান্নামের ‘বুলস’ নামক কারাগারে তাদেরকে তাড়া করে নিয়ে যাওয়া হবে। জাহান্নামে তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে এবং সেখানে তাদের ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত ঘাম বা দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ জাতীয় পানীয় পান করতে দেওয়া হবে’।[13] উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে যারা তথাকথিত অভিজাত ছিল, যারা আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করত এবং যারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করত ও অযথা তর্ক-বিতর্ক করত, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি বর্ষণ করা হবে। এতে তাদের চর্বি, চামড়া, নাড়ি-ভুঁড়ি, কলিজা সহ সব কিছুই জ্বলে যাবে। অতঃপর তা পশ্চাৎদেশ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়বে। তারপর পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ﺧُﺬُﻭْﻩُ ﻓَﺎﻋْﺘِﻠُﻮْﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻮَﺍﺀِ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴْﻢِ، ﺛُﻢَّ ﺻُﺒُّﻮْﺍ ﻓَﻮْﻕَ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴْﻢِ، ﺫُﻕْ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳْﺰُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳْﻢُ، ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺑِﻪِ ﺗَﻤْﺘَﺮُﻭْﻥَ . ‘তাকে ধর এবং টেনে- হেচড়ে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে যাও। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও এবং (বলা হবে) স্বাদ গ্রহণ কর, তুমিতো ছিলে মর্যাদাবান অভিজাত। এটা তো সেটাই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে’ (দুখান ৪৪/৪৭-৫০)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ﻫَﺬَﺍﻥِ ﺧَﺼْﻤَﺎﻥِ ﺍﺧْﺘَﺼَﻤُﻮْﺍ ﻓِﻲْ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻓَﺎﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﻗُﻄِّﻌَﺖْ ﻟَﻬُﻢْ ﺛِﻴَﺎﺏٌ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﺭٍ ﻳُﺼَﺐُّ ﻣِﻦْ ﻓَﻮْﻕِ ﺭُﺀُﻭْﺳِﻬِﻢُ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴْﻢُ، ﻳُﺼْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ ﻣَﺎ ﻓِﻲْ ﺑُﻄُﻮْﻧِﻬِﻢْ ﻭَﺍﻟْﺠُﻠُﻮْﺩُ، ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻣَﻘَﺎﻣِﻊُ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳْﺪٍ، ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﺩُﻭْﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﺮُﺟُﻮْﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﻏَﻢٍّ ﺃُﻋِﻴْﺪُﻭْﺍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻭَﺫُﻭْﻗُﻮْﺍ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳْﻖِ . ‘এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ। তারা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে। আর যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য লৌহ নির্মিত হাতুড়ী সমূহ থাকবে। যখনই তারা তাতে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সেখান থেকে বের হ’তে চাইবে, তখনই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং (বলা হবে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন কর’ (হজ্জ ২২/১৯-২২)। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴْﻢَ ﻟَﻴُﺼَﺐُّ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺀُﻭْﺳِﻬِﻢْ ﻓَﻴَﻨْﻔُﺬُ ﺍﻟْﺠُﻤْﺠُﻤَﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﻠُﺺَ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﻮْﻓِﻪِ ﻓَﻴَﺴْﻠُﺖَ ﻣَﺎ ﻓِﻰْ ﺟَﻮْﻓِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻤْﺮُﻕَ ﻣِﻦْ ﻗَﺪَﻣَﻴْﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺼَّﻬْﺮُ ﺛُﻢَّ ﻳُﻌَﺎﺩُ ﻛَﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ . ‘ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি কাফেরদের মাথায় ঢালা হবে, যা তাদের মাথা ছিদ্র করে পেটে গিয়ে পৌঁছবে এবং পেটে যা কিছু আছে তা বের করে ফেলবে এবং তার পেট থেকে বের হয়ে পায়ে এসে পড়বে। আর এটাই ﺍﻟﺼَّﻬْﺮُ শব্দের ব্যাখ্যা। অতঃপর পুনরায় সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে’ (এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি)।[14] (গ) জাহান্নামীদের খাদ্য : জাহান্নাম গহবরে আগুনের লেলিহান শিখা পাপী মানুষকে উপর-নীচ, ডান- বাম সকল দিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। সেখানে পার্থিব আগুনের ৭০ গুণ উত্তাপ সম্পন্ন এই মহা হুতাশনে জাহান্নামের অধিবাসীরা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। সেখানে তাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু থাকবে না। থাকবে না শান্তিদায়ক কোন উপাদান। সেখানে শুধু থাকবে চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার, অপমান, অনুতাপ আর লজ্জা। এ রকম জটিল ও কঠিন মুহূর্তে তারা চরম তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে হাহাকার করবে। কিন্তু কোথাও কোন ঠান্ডা পানীয় ও উত্তম আহারের ব্যবস্থা থাকবে না। থাকবে না পরিতৃপ্ত হওয়ার মত কোন খাদ্য। থাকবে শুধু রক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ, কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ফল, সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ নোংরা এবং গলায় আটকে যাওয়া খাবার প্রভৃতি। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের মোট চার ধরনের খাবারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যা নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হ’ল- ১. ﺯَﻗُّﻮﻡ (তেতো ফলবিশিষ্ট এক প্রকারের কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ) : দুর্গন্ধযুক্ত তেতো কাঁটাযুক্ত এক প্রকার ভারী খাবারকে ﺯَﻗُّﻮﻡ বলে। যা খাদ্য হিসাবে জাহান্নামীদের দেওয়া হবে। তা জাহান্নামের নিম্নদেশ থেকে উদ্গত হবে। এর গুচ্ছ হবে শয়তানের মস্তকের ন্যায়। কাফেররা সেখানে এটা ভক্ষণ করবে এবং তাদের উদর পূর্ণ করবে। এটি এমন একটি বৃক্ষ যা দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তির মত এটাকেও সৃষ্টি করবেন।[15] এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ﺃَﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻧُﺰُﻟًﺎ ﺃَﻡْ ﺷَﺠَﺮَﺓُ ﺍﻟﺰَّﻗُّﻮْﻡِ، ﺇِﻧَّﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻫَﺎ ﻓِﺘْﻨَﺔً ﻟِﻠﻈَّﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ، ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺷَﺠَﺮَﺓٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻓِﻲْ ﺃَﺻْﻞِ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴْﻢِ، ﻃَﻠْﻌُﻬَﺎ ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﺭُﺀُﻭْﺱُ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦِ، ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﺂﻛِﻠُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻓَﻤَﺎﻟِﺌُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﺒُﻄُﻮْﻥَ .‘আপ ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, নাকি যাক্কূম বৃক্ষ? এটাকে আমরা অত্যাচারীদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরী করেছি। এ বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে। তার গুচ্ছ যেন শয়তানের মস্তকের ন্যায়। অবশ্যই তারা এটা হ’তে ভক্ষণ করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে’ (ছাফফাত ৩৭/৬২-৬৬)। উল্লেখ্য যে, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাক্কূম গাছের কথা বলে মানুষদের জাহান্নাম সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করতেন, তখন আবূ জাহল তার সাথীদের উদ্দেশ্য করে বলত যে, তোমরা শুন! আগুনে নাকি গাছ হবে? অথচ আগুন গাছকে খেয়ে ফেলে। এটা কোন ধরনের কথা? তখন আল্লাহ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺷَﺠَﺮَﺓٌ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻓِﻲْ ﺃَﺻْﻞِ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴْﻢِ আয়াতটি নাযিল করে তাদেরকে কঠোরভাবে জওয়াব দেন। মূলতঃ যাক্কূম গাছ আগুন থেকেই তৈরী এবং আগুনই তার খাদ্য’।[16] ২. ﺿَﺮِﻳﻊٌ (সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ কাঁটাযুক্ত শুষ্ক নোংরা খাবার) : মূলত ﺿَﺮِﻳﻊ আগুনের একটি বৃক্ষের নাম এবং জাহান্নামের পাথর। এতে বিষাক্ত কণ্টক বিশিষ্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট আহার্য। এটা ভক্ষণে দেহ পরিপুষ্টও হবে না, ক্ষুধাও নিবৃত হবে না এবং অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। [17]আল্লামা ত্বানতাবী (রহঃ) বলেন, এটি জাহান্নামীদেরর প্রদত্ত আযাবের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একটি স্তরের আযাব। তাদের মধ্যে কেউ যাক্কূম, কেউ গিসলীন আবার কেউ যরী‘ ভোগ করবে।[18] ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজাহিদের সূত্রে বলেন, এটি একপ্রকার কাঁটাযুক্ত গুল্ম। তা যখন সবুজ থাকে তখন তাকে ﺿَﺮِﻳﻊ বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায় তখন হিজাযবাসীরা একেই ﺿَﺮِﻳﻊ বলে। এটা এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা।[19] এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻬُﻢْ ﻃَﻌَﺎﻡٌ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺿَﺮِﻳْﻊٍ، ﻻَ ﻳُﺴْﻤِﻦُ ﻭَﻻَ ﻳُﻐْﻨِﻲْ ﻣِﻦْ ﺟُﻮْﻉٍ. ‘তাদের জন্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া কোন খাবার থাকবে না। যা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত করবে না’ (গা-শিয়াহ ৮৮/৫-৭)। ৩. ﺫَﺍ ﻏُﺼَّﺔٍ (গলায় আটকে যাওয়া খাবার) : এটি এমন খাবার যা কণ্ঠনালীতে আটকে থাকে এবং যেখান থেকে কোন কিছু বের হ’তে পারে না ও কোন কিছু ঢুকতেও পারে না। বরং কদর্যতা, দুর্গন্ধ ও তিক্ততার কারণে সেখানে তা আটকে থাকে।[20] অন্যত্র কাঁটাযুক্ত খাবার গলায় আটকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনভাবে তাদের প্রতি শাস্তি অব্যাহত থাকবে। [21] এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ﺇِﻥَّ ﻟَﺪَﻳْﻨَﺎ ﺃَﻧْﻜَﺎﻻً ﻭَﺟَﺤِﻴْﻤًﺎ، ﻭَﻃَﻌَﺎﻣًﺎ ﺫَﺍ ﻏُﺼَّﺔٍ ﻭَﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﺃَﻟِﻴْﻤًﺎ . ‘আমাদের নিকটে রয়েছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত বহ্নিশিখা। আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি’ (মুযযাম্মিল ৭৩/১২-১৩)। ৪. ﻏِﺴْﻠِﻴْﻦٍ (রক্ত ও পুঁজ) : এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। (ঘ) জাহান্নামের আগুন : জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন, ﻛَﻠَّﺎ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻈَﻰ، ﻧَﺰَّﺍﻋَﺔً ﻟِﻠﺸَّﻮَﻯ، ﺗَﺪْﻋُﻮ ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺑَﺮَ ﻭَﺗَﻮَﻟَّﻰ، ﻭَﺟَﻤَﻊَ ﻓَﺄَﻭْﻋَﻰ . ‘না, কখনো নয়, এটাতো (লাযা) লেলিহান অগ্নিশিখা। যা চামড়া তুলে দিবে। সে ঐ ব্যক্তিকে আহবান করবে যে, (সত্যের প্রতি) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল এবং বিমুখ হয়েছিল, সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল এবং তা আগলে রেখেছিল’ (মা‘আরিজ ৭০/১৫-১৮)। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করার জন্য অত্যন্ত রুক্ষ্ম, নির্দয় এবং কঠোর স্বভাব সম্পন্ন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। যাদের সংখ্যা হবে ১৯ জন। এ মর্মে তিনি বলেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮْﺍ ﻗُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴْﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻭَﻗُﻮْﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣَﻼَﺋِﻜَﺔٌ ﻏِﻼَﻅٌ ﺷِﺪَﺍﺩٌ ﻻَ ﻳَﻌْﺼُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﻭَﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ ﻣَﺎ ﻳُﺆْﻣَﺮُﻭْﻥَ . ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর ঐ আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করেন না আল্লাহ্র কোন নির্দেশ। যা করতে আদিষ্ট হন তারা কেবলমাত্র তাই করেন’ (তাহরীম ৬৬/৬)। আর জাহান্নামের ওপর প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত রয়েছে ১৯ ফেরেশতা (মুদ্দাচ্ছির ৭৪/৩০)। জাহান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামের আগুন অনবরত প্রজ্বলিত করছে এবং সর্বদা করবে। যা কখনো শীতল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺧَﺒَﺖْ ﺯِﺩْﻧَﺎﻫُﻢْ ﺳَﻌِﻴْﺮًﺍ ‘যখনই (আগুন) স্তিমিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখনই আমরা তাদের জন্য আগুন আরো বৃদ্ধি করে দেব’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৯৭)। পৃথিবীতে প্রজ্বলিত আগুনের তুলনায় জাহান্নামে আগুন ৬৯ গুণ অধিক উত্তাপ সম্পন্ন। আর তার প্রতিটি অংশের উত্তাপের তীব্রতা দুনিয়ার আগুনের তীব্রতার ন্যায়। মূলতঃ তার তীব্রতা ও প্রচন্ডতা এত শক্তিশালী যে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ﻧَﺎﺭُﻛُﻢْ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟَّﺘِﻰْ ﻳُﻮْﻗِﺪُ ﺍﺑْﻦُ ﺁﺩَﻡَ ﺟُﺰْﺀٌ ﻣِﻦْ ﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﺟُﺰْﺀًﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺮِّ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻜَﺎﻓِﻴَﺔً ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ r ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻓُﻀِّﻠَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺑِﺘِﺴْﻌَﺔٍ ﻭَﺳِﺘِّﻴْﻦَ ﺟُﺰْﺀًﺍ ﻛُﻠُّﻬَﺎ ﻣِﺜْﻞُ ﺣَﺮِّﻫَﺎ . ‘তোমাদের এই আগুন যা বনী আদম প্রজবলিত করে তা জাহান্নামের আগুনের তীব্রতার সত্তর ভাগের এক ভাগ। ছাহাবীগণ বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহ্র কসম! সে আগুন পৃথিবীর ন্যায় হওয়াই তো যথেষ্ট ছিল। তখন তিনি বললেন, তাকে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৬৯ গুণ অধিক উত্তাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। আর তার প্রত্যেকটি ভাগ দুনিয়ার আগুনের মত উত্তাপ সম্পন্ন হবে’।[22] জাহান্নামের আগুন এত দাহ্যশক্তি সম্পন্ন হবে যে, সেখানে জাহান্নামীরা জ্বলতে জ্বলতে কয়লায় পরিণত হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﺧْﺮِﺟُﻮْﺍ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻰْ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝُ ﺣَﺒَّﺔٍ ﻣِﻦْ ﺧَﺮْﺩَﻝٍ ﻣِﻦْ ﺇِﻳْﻤَﺎﻥٍ ﻓَﻴُﺨْﺮَﺟُﻮْﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﺪِ ﺍﺳْﻮَﺩُّﻭْﺍ ﻓَﻴُﻠْﻘَﻮْﻥَ ﻓِﻰْ ﻧَﻬَﺮِ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺷَﻚَّ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﻓَﻴَﻨْﺒُﺘُﻮْﻥَ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﻨْﺒُﺖُ ﺍﻟْﺤَﺒَّﺔُ ﻓِﻰْ ﺟَﺎﻧِﺐِ ﺍﻟﺴَّﻴْﻞِ ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﺮَ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺻَﻔْﺮَﺍﺀَ ﻣُﻠْﺘَﻮِﻳَﺔً . ‘জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের কর। তখন জাহান্নাম থেকে তাদের বের করে আনা হবে। সে সময় তারা প্রজ্বলিত কয়লার ন্যায় হবে। তখন তাদের আবার হায়া বা হায়াত (বর্ণনাকারী মালেক- এর সন্দেহ) নামক নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। এতে তারা সেখানে নতুন জীবন লাভ করবে। যেমনভাবে নদীর তীরে চারা গজায়। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি দেখনি যে, নদীর তীরে চারা গাছ যেমন হলুদ বর্ণের পেচানো অবস্থায় জন্ম নেয়’।[23] এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে, ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ t ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ r ﻳُﻌَﺬَّﺏُ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺣِﻴْﺪِ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺣُﻤَﻤًﺎ ﺛُﻢَّ ﺗُﺪْﺭِﻛُﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻓَﻴُﺨْﺮَﺟُﻮْﻥَ ﻭَﻳُﻄْﺮَﺣُﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴَﺮُﺵُّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻓَﻴَﻨْﺒُﺘُﻮْﻥَ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻨْﺒُﺖُ ﺍﻟْﻐُﺜَﺎﺀُ ﻓِﻰْ ﺣِﻤَﺎﻟَﺔِ ﺍﻟﺴَّﻴْﻞِ ﺛُﻢَّ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮْﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ . জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তাওহীদপন্থীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিদের জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এমনকি তারা জ্বলতে জ্বলতে কয়লায় পরিণত হবে। অতঃপর তারা আল্লাহ্র রহমত লাভ করবে, তখন তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপর জান্নাতের দরজায় তাদেরকে বসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তিনি বলেন, জান্নাতবাসীগণ তাদের উপর পানি প্রবাহিত করে দিবে। তখন তারা এমনভাবে উঠে দাঁড়াবে, যেমন কোন বীজ বন্যার পানিতে ভেসে এসে নতুন চারা জন্মায়। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[24] তাছাড়া সেখানে সঊদ নামক একটি আগুনের পাহাড় রয়েছে এবং জাহান্নামীদের পরিধেয় বস্ত্র, বিছানাপত্র, ছাতা-বেষ্টনীসহ সবকিছু হবে অগ্নি নির্মিত। যা ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির চরম সীমায় পৌঁছানো হবে। [চলবে] ________________________________________ [1]. বুখারী হা/৩২৩৬ ‘সৃষ্টি সূচনা’ অধ্যায়। [2]. মুসলিম হা/২১৪০; মিশকাত হা/২৯৪২; মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৪৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৬৬। [3]. বুখারী হা/৫৩৬-৫৩৭; মুসলিম হা/১৪৩২; মিশকাত হা/৫৯১; দারেমী হা/২৮৪৫। [4]. ড.ওমর ইবনু সুলায়মান আল-আশকার, আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, ১৬৯ পৃঃ। [5]. আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, পৃঃ ১৬৮। [6]. ঐ। [7]. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আল- মু‘জামুল ওয়াফী, (ঢাকা : রিয়াদ প্রকাশনী, ১১শ সংস্করণ, জানুয়ারী ২০০৫), পৃঃ ৬২৫। [8]. তাফসীরে ত্বাবারী ২২/৪৬ পৃঃ। [9]. তাফসীরে কুরতুবী ১০/৩৯৪ পৃঃ; আদ- দুররুল মানছূর ৫/৩৮৫ পৃঃ, তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/১৫৪ পৃঃ। [10]. বাহরুল ঊলূম ২/৩৪৫ পৃঃ। [11]. আদ-দুররুল মানছুর ৩/১৭৫ ও ৭/২৪২ পৃঃ; তাফসীর ইবনু কাছীর ৩/১৮৭ পৃঃ; তাফসীরে খাযেন ১/২০৯ পৃঃ। [12]. মুসলিম হা/৫৩৩৫; মিশকাত হা/৩৬৩৯। [13].আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৫৭; তিরমিযী হা/২৪৯২; মিশকাত হা/৫১১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৪০। [14]. মুসনাদে আহমাদ হা/৮৮৫১; শারহুস সুন্নাহ হা/৪৪০৬ ‘জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য ও তার অধিবাসী’ অনুচ্ছেদ; মুসনাদে ইবনু মুবারক হা/১২৮; ছহীহ আত- তারগীব ওয়াত-তারহীব হা/৩৬৭৯, হাদীছ হাসান। [15]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী, পৃঃ ৪০৬৬। [16]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/২০ পৃঃ ‘উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য’। [17]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ; আদ-দুররুল মানছুর ৮/৪৯১ পৃঃ। [18]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী পৃঃ ৪৪৯৩। [19]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ; বুখারী ২/৭৩৬ পৃঃ, অনুচ্ছেদ-৮৮। [20]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী ৪৩৬১ পৃঃ; তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/২৫৬ পৃঃ; তাফসীরে ত্বাবারী ২৩/৬৯১ পৃঃ। [21]. তাফসীরে বাহরুল ঊলূম ৩/৪৮৮ পৃঃ; তাফসীরে জালালাইন পৃঃ ৭৭৪; তাফসীরে খাযেন ৭/১৬৯ পৃঃ; তাফসীরে ত্বাবারী ২৩/৬৯১ পৃঃ; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/৪৬ পৃঃ। [22]. মুসলিম হা/৭৩৪৪; তিরমিযী হা/২৫৮৯। [23]. বুখারী হা/২২; মুসলিম হা/৪৭৫; মিশকাত হা/৫৫৮০। [24]. তিরমিযী হা/২৫৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৮১০৩।

Post a Comment

0 Comments