অভিভাবকবিহীন বিয়ে: ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা যার নিয়তি
জিয়াউর রহমান
পরিবার ও অভিভাবকবিহীন বিয়ে ইদানীং খুব বেড়েছে৷ প্রায়ই ফোন আসে অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সহীহ হবে কী না, এই মাসআলা জানতে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে সমস্ত যুবক ভাই ইবাদতের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাব ফলো করেন না, বরং আহলে হাদীস আলিমগণের বাতলানো পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যকার কিছু যুবক ভাইও অবৈধ রিলেশনে জড়িয়ে অভিভাবকবিহীন বিয়েতে হানাফী মাযহাবের ফতোয়া খোঁজেন৷
তারা ভালো করেই জানেন, আহলে হাদীস আলিমগণ এই বিয়ের বৈধতা দেন না৷ বৈধতা না দেয়া কতটুকু বাস্তবসম্মত ও দলিলসমৃদ্ধ; সেটা অবশ্য ভিন্ন আলোচনার বিষয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নিজের সুবিধার অনুকূল হওয়ায় একটি মাসআলায় নিজের সুবিধা আদায়ের জন্যে হানাফী হয়ে যাওয়াকে আমি অন্তত ভালো চোখে দেখি না৷ তাছাড়া নিজের উপর সুবিধাবাদী হওয়ার অপবাদ চাপার আশঙ্কায় উলামায়ে কেরাম বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মাযহাব পরিবর্তন করাকে জায়েয মনে করেন না৷
অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সহীহ হওয়া এক জিনিস আর এ ধরনের বিয়েতে শরীয়তকর্তৃক উৎসাহপ্রদান আরেক জিনিস৷ অভিভাবক ছাড়া দুইজন স্বাক্ষীর মাধ্যমে বিয়ে সহীহ হয়ে গেলেও শরীয়ত কখনোই এরকম চোরাগুপ্তা বিয়েতে উৎসাহ প্রদান করে না৷ কারণ এ ধরনের বিয়েতে মা-বাবাসহ অভিভাবক, স্বজনদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়৷ মা-বাবা ভীষণ কষ্ট পান৷ পরিবারে নেমে আসে অশান্তি, বিশৃংখলা৷ মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া হারাম, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারেও হাদীসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে৷ তাই বিয়ে সহীহ হলেও অবশ্যই এমন বিয়ে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য নয়৷
অভিভাবকবিহীন নিজস্ব সিদ্ধান্তে বিয়ের পরিস্থিতি তখনই সৃষ্টি হয়, যখন দুইজন বিয়ের উপযুক্ত তরুণ-তরুণী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে৷ অতঃপর যখন তাদের উভয়ে কিংবা যে কোনো একজনের ভেতর আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়, গোনাহের অনুশোচনা জাগে, তখনই বিয়ের চিন্তা মাথায় আসে৷ যতই বিয়ের তাড়না অনুভূত হয়, ততই পরিবার মেনে না নেওয়ার শঙ্কা বাড়তে থাকে৷ এরপরই দুজন একা একা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যা তাদের জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকি ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷
যে পিতা-মাতা সন্তানকে লালন-পালন করলেন, তিলে তিলে গড়ে তুললেন, সেই পিতা-মাতাকে না জানিয়ে নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলা সত্যিই অমানবিক৷ পিতা-মাতার জন্যে বিরাট কষ্টের ব্যাপার৷ পিতা-মাতার বদ-দুআ এবং অভিশাপ পাওয়ার বড় কারণ৷ তাই হাদীসে এমন বিয়েকে বাতিল বলা হয়েছে৷ মানে এমন বিয়ে অসম্পূর্ণ ও নড়বড়ে থেকে যায়৷ যে কোনো সময় পারিবারিক চাপে ভেঙ্গে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে৷ তাই প্রথমে পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে, ছেলে-মেয়ে উপযুক্ত হলে বিয়ের তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া৷ তড়িৎ ব্যবস্থা না হলে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সন্তানকে হতাশামুক্ত রাখা৷ আর সন্তানেরও উচিত ধৈর্যধারণ করা এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করা৷
0 Comments