জিয়াউর রহমান ই'তিকাফে বসতে ইচ্ছুক ভাই-বোনদের জন্যে দশটি পরামর্শ: ১. ই'তিকাফ অর্থ হচ্ছে, অবস্থান করা, বিচ্ছিন্ন হওয়া, নিঃসঙ্গ হওয়া৷ বান্দা ই'তেকাফে বসবে একমাত্র আল্লাহ পাকের সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যে৷ দুনিয়ার সব ঝামেলা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নিঃসঙ্গ হয়ে এই দশদিনের জন্যে মসজিদে আল্লাহর মেহমান হওয়াই ই'তিকাফের দাবি৷ তবে যদিও ই'তিকাফে ল্যাপটপ বা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করলে বা ব্যবহার করলে, পত্রিকা কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ই'তিকাফ নষ্ট হবে না৷ কিন্তু আদবের খেলাফ এবং অনুচিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ অযথা সময় নষ্ট হবে৷ ই'তেকাফের মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হবে৷ তাই সওয়াবও কম হবে নিঃসন্দেহে৷ বেশ থেকে বেশ মোবাইল সঙ্গে রাখা যেতে পারে৷ শুধু রিসিভ করবেন৷ প্রয়োজনীয় কথা সেরে রেখে দিবেন৷ ২. নিয়ত করেছেন ই'তিকাফে বসবেন, কিন্তু খাবার এনে দেবার মানুষ নেই৷ কোনো অসুবিধা নেই৷ আপনার জন্যে বাসায় বা বাড়িতে গিয়ে খাবার নিয়ে আসার সুযোগ আছে৷ খাবার আগে প্রস্তুত রাখতে বলবেন৷ তড়িৎ গিয়েই নিয়ে আসবেন৷ পথে কিংবা বাসায় সময় নষ্ট করবেন না৷ এমতাবস্থায় আপনার ই'তিকাফ ভঙ্গ হবে না৷ তবে ঘরে কিংবা পথে অন্য কাজে জড়িত হলে ই'তিকাফ ভেঙ্গে যাবে৷ ৩. মসজিদের সংযুক্ত গোসলখানা, যা মসজিদের ভিতরের অন্তর্ভুক্ত নয়৷ তাই জুমুআ বা শারীরীক প্রশান্তির জন্যে গোসলখানা বা অযুখানায় গিয়ে গোসল করা ই'তিকাফরত অবস্থায় জায়েয নয়৷ তবে ইস্তেনজা সেরে ওযু করতে আসার সময় ওযু করতে যত সময় লাগে, এতটুকু সময়ের ভেতর সারা শরীরে দুই-তিন মগ পানি ঢেলে দিতে পারেন৷ এতে করে ওযুও আদায় হয়ে গেলো, সংক্ষিপ্ত গোসলের কাজও সারা হয়ে গেলো৷ তবে লুঙ্গি ধুয়ার জন্যে আলাদা সময় ব্যয় করা যাবে না৷ তবে ফরয গোসলের ব্যাপারটি এখানে স্বতন্ত্র৷ ৪. মসজিদ মনে করে যদি মসজিদের মূল সীমানার বাইরে চলে যান, যা প্রকৃতপক্ষে মসজিদ নয়, তাহলে ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে৷ তাই সতর্কতামূলকভাবে ই'তিকাফে বসার পূর্বে মসজিদের (শুধু যে অংশ নামাযের জন্যে নির্ধারিত) মূল সীমানা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত৷ মনে রাখতে হবে, মসজিদের সিড়ি, ইমাম সাহেবের হুজরা, ওযুখানা, মক্তবঘর এ স্থানগুলো মসজিদের মূল সীমানার অন্তর্ভুক্ত নয়৷ ৫. মসজিদের স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে নিজ প্রয়োজনে মসজিদের লাইট, ফ্যান ব্যবহার করেছেন৷ মোবাইল চার্জ দিয়েছেন৷ ই'তিকাফ শেষ করে বের হওয়ার সময় এই দশদিনের অতিরিক্ত বিল অনুমান করে মসজিদের দানবাক্সে দিয়ে আসবেন৷ ৬. ই'তিকাফে বসে কিছু না পড়ে একেবারে মুখ বন্ধ করে রাখা মাকরূহ৷ অতিরিক্ত কথাবার্তা ও গল্পগুজব করাও মাকরূহ৷ তাই অনর্থক গল্পগুজবে সময় নষ্ট করা ই'তিকাফের উদ্দেশ্যের বিপরীত হওয়ায় মু'তাকিফের জন্যে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য৷ ৭. ই'তিকাফ অবস্থায় কেউ সাক্ষাতের জন্যে এলে তার সঙ্গে কথা বলা, কুশল বিনিময় করা জায়েয আছে৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন অনর্থক কথাবার্তা না হয়৷ ৮. ই'তিকাফের ফযীলত কেবল পুরুষদের জন্যে নির্দিষ্ট নয়৷ বরং নারীরাও ই'তিকাফের ফযীলতের অংশীদার৷ বিবাহিতা হলে স্বামীর অনুমতি ছাড়া ই'তিকাফে বসা ঠিক নয়৷ স্বামীদেরও উচিত অকারণে স্ত্রীদেরকে এই ফযীলত থেকে বঞ্চিত না করা৷ ৯. নারীরা মসজিদে নয়, নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট ইবাদতের স্থানে ই'তিকাফে বসবেন৷ ইবাদতের জায়গা নির্দিষ্ট না থাকলে ই'তিকাফের জন্যে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নিবেন৷ খাবার-দাবার এখানেই সারবেন৷ শরীয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া এই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবেন না৷ ই'তিকাফের জায়গা ছেড়ে ঘরের অন্য জায়গাতে গেলেও ই'তিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে৷ স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকতে পারলেও স্বামী-স্ত্রীসূলভ ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে৷ যদি হয়েই যায়, তাহলে ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে৷ ১০. যে কোনো কারণে ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে পরবর্তীতে রোযাসহ কেবল একদিনের ই'তিকাফের কাযা করতে হবে৷
0 Comments