অভিশপ্ত প্রেম


অভিশপ্ত প্রেম.

.
.
আফিয়া জিনাত ইসফা..!! সবাই ইসফা বলেইডাকে..!! সবে মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে, ওর সৌন্দর্যরূপের বর্ণনা দিতে গেলে রীতিমত একটা কাব্য রচিত হয়ে যাবে.... এক কথায় স্বর্গীয়া অপ্সরী....!! বাবা মায়ের একমাত্র আদরের দুলালী। রুপে যেমন ছিল অতুলনীয়, গুনে ঠিক ততটাই.... খুব অল্পসময়ের মধ্যেই নিজের মাধুর্যপূর্ণ আচারণ দিয়ে সবার মনরাজ্য জয় করার দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল ওর....!!
.
.
নতুন কলেজে সবাইকে ভাল ভাবে না চিনলেও এতদিনে চিনে ফেলেছে। জয় করতে সক্ষম হয়েছে বান্ধবীদের হৃদয়নিংড়ানো ভালবাসা.....!! ইসফার একটা বিশেষ গুন ছিল ও ছেলেদের সাথে একদমই মিশতো না, প্রয়োজনে বড়জোর দু এক কথা..!!
.
এভাবেই কেটে গেল তিনটি মাস..
.
হঠাৎ একদিন.........
.
.
ঃ এই যে শুনছেন? বাতাসের উপর ভর করে একটা শব্দ পৌছলো ইসফার কর্ণকুহরে। পিছনের ফিরে দেখল একটা সুদর্শন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ...!! 
ঃ আমাকে বলছেন ?? অবনত মস্তকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল ইসফা।
ঃ জ্বী হ্যাঁ, আপনাকে বলছিলাম। আপনার সাথে জরুরী কিছু কথা ছিল। যদি একটু সময় দিতেন তবে কৃতজ্ঞ হতাম।
ঃ কি বলবেন বলুন।
ঃ চলুন, ওখানে গিয়ে বসি। তারপর বলি।
ঃ সম্ভব নয়। আমি বরং যাই। তাড়া আছে আমার। হাটতে শুরু করলো ইসফা।
ঃ প্লিজ, শুনুন। একটা কথা শুনুন মাত্র.......
ঃ আচ্ছা বলুন।
ঃ আমি আপনাকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবেসে ফেলেছি। প্লিজ ফিরিয়ে দিবেননা আমায়।
.
থমকে গেল ইসফা.! কি বলছে ছেলেটা ??ভালবাসা ?? বিবাহপূর্ব যে প্রেম ভালবাসা ইসলাম হারাম করে দিয়েছে, সেই ভালবাসা ??
.
ইসফার চোখের কোণে মুক্তা সাদৃশ্য এক বিন্দু অশ্রু বের হয়ে এল। আর তাতে সিক্ত হলো গণ্ডদেশ ।।
ঃ মাফ করবেন।। আমার পক্ষে সম্ভব হবে না । থেমে থেমে আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল ইসফা।
.
আর কিছু না বলেই পথ ধরল বাড়ির দিকে।
.
আসিফ! হ্যাঁ আসিফই ছেলেটার নাম। বিত্তবান বাবার একমাত্র ছেলে... তবে চারিত্রিক অবক্ষয়ের কিছু কথা শোনা যায় ওর নামে। বাস্তব হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
.
প্রতিদিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আসিফ, ইসফার আসা যাওয়ার পথে অপলক নেত্রে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে.......!!
.
এভাবে আর কতদিন দূরে থাকবে ইসফা ? আসিফ তো দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে করেই হোক ইসফাকে শিকারের জালে আটকাবেই।।
.
ঠিক এভাবেই একদিন গলে গেল ইসফা... ভুলে গেল ইসলামের সেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
.
ওদের সম্পর্কের বয়স আট মাস..... দীর্ঘ আট মাসে হয়েছে অনেক কথা... অনেক আড্ডা... আর অনেক আনন্দ।।
কিন্তু আসিফ তার কাঙ্খিত লক্ষে এখনো পৌছতে পারেনি।
.
রেস্টুরেন্টে দেখা হল দুজনের...
.
ঃ আমি তোমায় একান্ত কাছে পেতে চাই ইসফা
ঃ বিয়ে টা হোক। তারপর।।
ঃ বিয়ের আর দেরী কী? আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী হবো, এটাতো অবশ্যম্ভাবী।।
এই বলেই নিজের আঙুল থেকে একটা আংটি খুলে পড়িয়ে দিল ইসফার হাতে....
এখন তো আমরা স্বামী স্ত্রী।কেঁপে উঠল ইসফার পুরো শরীর.....
ঃ না, এ হতে পারে না..! এটা আদৌ বিয়ে হতে পারে না.... এভাবে না আমাকে তোমার পরিবার মেনে নেবে, না তোমাকে আমার পরিবার.....!!
হাত থেকে আংটিটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে দ্রুতপদে চলে গেল ইসফা।
.
" সুন্দরী, তোমার দেমাগ আমি দেখে নিবো, আমার উদ্দেশ্যে আমাকে পৌঁছতে হবেই। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাকা তো করতেই হবে" ক্ষীণকণ্ঠে বলল আসিফ।
.
তিনদিন পর কলেজে এলো ইসফা । ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে হাত জোর করে মিনতি করে বলল আসিফ,
ঃ ওগোঁ প্রেয়সী আমার। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
নিমিষেই ভুলে গেল ইসফা সব অভিমান... বাস্তব বলতে মেয়েদের হৃদয় গোলাপের পাপড়ির চেয়েও কোমল।।
.
এভাবে চলে গেল সাতটি দিন......
.
পরের দিন আসিফ এসে বলল
ঃ জান পাখি, আজ আমার আন্টি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন, আমি তোমার কথা আন্টিকে বলেছি, এবং এটাও বলেছি যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আন্টি তোমাকে দেখার পরই আমার পরিবারের সাথে কথা বলবে।
.
সরলমনা ইসফা বুঝতে পারেনি তাকে নিয়ে কতটা গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তাই সে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানালো.......
.
পরদিন বাইকে চড়ে বসল আন্টির বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে.. বুঝলো না যে এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া...!!!
.
একটা দোতলা দালানের নিচে থামল বাইক। বাড়ির সামনে আধুনিক টাইপের একটা প্রাইভেট কার।
.
পরিবেশটা কেমন যেন ছমছমে...
গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকল ওরা দুজন, হঠাৎ কি মনে করে ইসফা তাকাল আসিফের মুখপানে... অবলোকন করল একটা পৈচাশিক হাসি....
কিছুটা হলেও মনের মধ্যে খটকা লাগল ইসফার ,
"তবে কি আমি ফাঁদে পড়ে গেলাম? " এমনই
একটা প্রশ্ন উঁকি দিল ওর মনে !!
ঃ কোথায় তোমার আন্টি ??
ঃ এইতো। সামনের রুমে ।।
ঘরের এক কোণের একটা রুম থেকে কয়েকটা লোকের ক্ষীণকণ্ঠের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে...
আসিফ ইসফা কে নিয়ে সেই রুমের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল।
.
ইসফার আর বুঝতে বাকি রইলো না।
.
ব্যাপার টা ওর কাছে দিবালোকের ন্যায় ভাস্বর হয়ে গেল, দেখল কয়েকটা ছেলে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আজেবাজে বকছে। আসিফ কে দেখেই সমস্বরে হেসে উঠল।
.
ঃ সে দিন তোমাকে ভালভাবে বলেছিলাম সুন্দরী । আপসে রাজী হওনি, তাই আমি বাধ্য হলাম আঙুল বাকা করতে।। চিৎকার করে বলল মানুষরূপী পশু আসিফ।
.
চিরসবুজের মনোরমা সুন্দর পৃথিবী নিমিষেই ইসফার কাছে অন্ধকার হয়ে এলো, অমাবস্যার গাঢ় কালো অন্ধকার। নিজের ভুল বুঝতে পারলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
.
ইসফার দু চোখ দিয়ে ঝরতে শুরু হলো অশ্রুর প্লাবন। হাত জোর করে কাকুতিমিনতি করলো আসিফের কাছে...... পায়ে পড়ে বলল আমাকে ছেড়ে দাও। এত বড় সর্বনাশ করনা আমার। প্লিজ.... ছেড়ে দাও....!!
পাষাণ আসিফ যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না...!!
কষে একটা থাপ্পড় মারলো ইসফার টুকটুকে গালে.... রক্তলাল হয়ে গেল ওর গণ্ডদেশ.....!!
.
হরিণের উপর ক্ষুধার্ত নেকড়ের ঝাঁপানোর মত ইসফার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আসিফ.... একে একে ওর সঙ্গী তিন জন......!!
কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে গেল ইসফা...!!
.
যখন চেতনা ফিরে পেলো. তখন সারা শরীর জুড়ে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করছে.....
বুঝতে বাকি রইলো তার উপর দিয়ে ভয়ানক তাণ্ডবলীলা বয়ে গেছে....
চারপাশের পরিবেশ ভিন্ন মনে হচ্ছে... 
পাশে বসা একটা মেয়ে.
ধরা গলায় দু একটা কথা বলে জানতে পারলো এটা আর অন্য কোন জায়গা নয়.... "" পতিতালয়"..!....
.
পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এলো.... 
এবার বুঝতে পারলো যাকে মন প্রাণ উজার করে ভালবেসে ছিল, সে কি প্রতিদান দিল...!! 
আজ ভীষণ মনে হতে লাগল ইসলামের সেই নিষেধাজ্ঞা..!!
.
আর বেঁচে থাকার আশা নেই... 
সন্ধ্যায় কোন ভাবে পালিয়ে এলো ওখান থেকে.!
নাহ.... 
এ অপবিত্র দেহ নিয়ে আর বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাবো না।
.
রাতের আধার নামার কিছুক্ষণ পর জীবনের আশা বিসর্জন দিয়ে রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়ল
ইসফা.....
খানিকক্ষণ পরে একটা প্রাইভেট কার হন হন করে ছুটে আসল...
ইসফা বুঝে নিল তার প্রাণ বায়ু এখনই উড়ে যাবে !!
কিন্তু গাড়ি কাছে আসতেই কষে ব্রেক করল।
.
দরজা খুলে বাইরে বের হলে জনাব রফিক আহমেদ।
ইসফা কে গাড়ি তে উঠিয়ে নিলেন........
অনেক জোর করার পর ইসফা জানালো তার উপর ঘটে যাওয়া তাণ্ডবলীলা ।
সান্ত্বনা দিলেন মিঃ রফিক। আশা জাগালেন বেঁচে থাকার..!! 
ফিরিয়ে দিতে চাইলে ওর বাড়ি। কিন্তু ইসফা যেতে অসম্মতি জানায়।..
ফলে রফিক সাহেবের বাড়িতেই থাকতে লাগল
ও...
তিনি চেয়েছিলেন নিজের মেয়ের মতই রাখবেন ইসফা কে। কিন্তু দাজ্জাল স্ত্রীর জন্য আর পারেন নি..!!
ফলে ধনী বাবার 'আদরের দুলালী' এখন কাজের মেয়ে.......
.
.
আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় ওগোঁ বোন আমার..!!
তোমরা একটা বার শোনো আমার কথা.. 
এই অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে শেষ করে দিও না নিজের জীবন টাকে।।
মেনে চলো ইসলামের বিধান... 
উভয় জগতের সফলতা তোমার পদচুম্বন করবেই...
হয়তো তুমি ভাববে তোমার বি.এফ. 'আসিফের' মত নয়..... কিন্তু কী দিয়ে বিশ্বাস করবে...
ইসফাও তো এমনই ভেবেছিল..!!
আমি ছেলে, 'ছেলে'দের আমার থেকে ভাল আর কে চিনবে ?? স্বার্থসিদ্ধি হলে কেটে পড়বেই,
সন্দেহ নেই...!!
বোন আমার..!! 
হাত জোর করে অনুরোধ করি...
একটা বার মেনেই দেখো, তুমি তো তোমার স্বামীর আমানত, তুমি তো তার রাজ্যের একমাত্র রাণী..!! তুমি তো অবহেলার পাত্রী নও।
পরিশেষে : যদি একজন ও শিক্ষা নেয় আমার এই লেখা থেকে। তবে স্বার্থক হবে আমার পরিশ্রম। ধন্য হবে তার উভয় জগত..!

Post a Comment

0 Comments